নরসিংদীর পলাশ উপজেলার আনারসের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। স্বাদ ও গুণগত মানের কারণে সারাদেশে এখানকার আনারসের একটি আলাদা পরিচিতি রয়েছে। একটি প্রবাদও আছে, ‘রাবানের আনারস রসে টস টস’ ক্ষেতে স্বাদ-নামেরও আছে জস”। রাবান হলো জেলার পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের একটি অঞ্চল। এ অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষকের প্রধান ফসলই হলো আনারস চাষ। এছাড়ও আনারস উৎপাদনের দিক থেকে পলাশ উপজেলা বাংলাদেশের প্রসিদ্ধতম একটি স্থান। এ উপজেলার ঘোড়াশাল ও জিনারদী ইউনিয়নের প্রায় তিন চতুর্থাংশ জমি আনারস চাষের উপযোগী। তাই এ এলাকার কৃষকদের প্রধান অর্থকরী ফসলই হচ্ছে আনারস।কৃষকরা জানান, সাধারণত লাল এটেল মাটিতে আনারস চাষের উপযোগী, আর এখানে রয়েছেও সেরকম মাটির গুনাগুণ। দেশের অনেক জায়গায় আনারসের চাষ হলেও রাবানের আনারসের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। সেই সুবাদে রাবানের সুস্বাদু আনারসের চাহিদা ও দাম দুটিই রয়েছে আলাদা। জেলার অন্যত্র কমবেশি আনারস উৎপন্ন হলেও জেলার উৎপাদিত আনারসের ৯০ ভাগই উৎপন্ন হয় পলাশ উপজেলায়।পলাশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এ উপজেলায় শুধু রাবানেরই ১৪৫ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ করা হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টরে ১১ টন হারে আনারসের ফলন হয়েছে ১ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন। এখানকার আনারস সুস্বাদু হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এর খ্যাতি।স্থানীয় আনারস চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় বহু বছর আগে থেকেই এ অঞ্চলে দেশীয় জাতের আনারসের চাষ হতো। এখানকার চাষকৃত দেশীয় প্রজাতির আনারস তেমন মিষ্টি ও সুস্বাদু ছিল না। পরে দেশী জাতের আনারস বাদ দিয়ে সিলেটী রসালো মিষ্টি আনারস চাষাবাদে ধীরে ধীরে গুণগতমান ও গঠনগত আকৃতি বৃদ্ধি পায়। ফলে এখাকার আনারস রসালো ও সুস্বাদু হয়ে ওঠে। এ প্রজাতির আনারসটি জলডুগি আনারস নামে সর্বমহলে পরিচিতি লাভ করে। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল হানিকুইন।এক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, এই এলাকায় ৫০০ একর জমিতে আনারসের চাষ হয়। প্রতি একর জমিতে প্রায় ১৮ হাজার আনারসের চারা রোপণ করা হয়। আনারস চাষের গ্রামগুলো হচ্ছে রাবান, বরাব, সাতটেকিয়া, বিলপাড়, ছয়দড়িয়া, বাঘাব, কুড়াইতলীসহ আরও কয়েকটি গ্রামে। তবে অধিকাংশ বাগানে এখন আনারসের চাষ হয় আদি কৃষি পদ্ধতিতে। কাঁঠাল, লটকন ও আম বাগানের নীচে আনারসের চাষ বহুকাল পদ্ধতি।আনারস চাষী রবি দাস জানান, এ বছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেন। প্রায় ৩২ বছর যাবৎ আনারসের চাষ করে আসছে। প্রতি বিঘা জমিতে আনারস চাষে ২০ হাজার টাকা খরচ হলে আনারসের ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘার আনারস বিক্রি হয় প্রায় ৭০/৮০ হাজার টাকা। এতে দেখা যায়, লাভ হয় দুই থেকে তিন গুণ।পলাশ উপজেলার কুড়াইতলী গ্রামের আনারস চাষী বাবু বলেন, আনারস চাষে নিয়মিতভাবে তেমন শ্রম দিতে হয় না। চারা রোপণে পুঁজি বিনিয়োগের তুলনায় লাভ বেশি পাওয়া যায়। প্রতি পিস আনারস ১০ থেকে ১৫ টাকায় জমি থেকেই কিনে নিয়ে যায় পাইকারি ক্রেতারা।কাঁটাবেড় গ্রামের চাষি বিজয় সরকার বলেন কাঁঠাল আম লটকন ও লিচু বাগানের মধ্যেও আনারসের চাষ করা যায়। ফলন শুরু হলে আনারস ও চারা বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়। তবে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় আনারসের ফলনটা একটু কম হয়েছে। তবে বাজারে দাম ভালো রয়েছে। এখানকার কৃষকদের দাবী, পঁচনশীল ফল হিসেবে আনারস সারাবছর সংরক্ষনের জন্যে একটি হিমাগার প্রতিষ্ঠা হলে আমরা আরো লাভবান হতে পারতাম।পলাশ উপজেলা কৃষি অফিসার আবু নাদির এসএ সিদ্দিকী জানান, দীর্ঘ বছর ধরে সনাতন পদ্ধতিত্বে আনারস চাষ হওয়ায় এটি ব্যাপক হারে প্রসার ঘটেনি। দ্রুতই এর পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তাই আমরা আধুনিক পদ্ধিতে আনারসের চাষে সকলকে উদ্বুদ্ধ করছি। তবে রাবানের এ বিখ্যাত আনারসের উৎপাদন বাড়াতে কৃষককে প্রযুক্তিগত সহযোগী ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।