বেশ কিছুদিন ধরে মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটি নিয়ে নানা মহলে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক চলছে। বইছে সমালোচনার ঝড়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ পরিবার ও প্রস্তাবিত নতুন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অনেক নেতাই এই কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি অভিযুক্ত, অযোগ্য এবং হাইব্রিড অনেকেই অর্থের মাধ্যমে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটিতে পদে আসছেন। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রস্তাবিত কমিটিতে পদ পাওয়া একাধিক নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত- সিদ্ধার্ত মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি,সি এর স্বাক্ষর নকল করার অপরাধে বহিষ্কার হয়েছিল। সেই সিদ্ধার্ত মাত্র দু’মাস আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ছেড়ে আসছেন জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে। রানা আমীর ওসমান রানা যে, ২০১৭ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পঙ্কজ কুমার কুণ্ডুর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচন করেন। তিনিও আছেন প্রস্তাবিত নতুন এই জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে। ডাঃ রাহুল মিত্র যার বাবা এখনো মাগুরা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি। আর ছেলে হচ্ছে জেলা আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য বিষায়ক সম্পাদক। জিল্লুর রহমান যার বাবা মাগুরা নাকোল ইউনিয়ন এর বিএনপির চেয়ারম্যান ছিল। তার পরিবারের সকলেই বিএনপির রাজধানীর সাথে জড়িত। সেই পরিবারের জিল্লুর রহমানও সদস্য হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের। সংগ্রাম যে কিনা ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতির বাড়ি ভাংচুরসহ আওয়ামিলীগ এর নেতা কর্মীদের অত্যাচার করার অপরাধে শেষ ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পায় নি। সেও জেলা আওয়ামীলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক। মীর শহিদুল ইসলাম বাবু যে ফেসবুকে প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে উল্টাপাল্টা তথ্য দিয়ে জন সাধারণের মধ্যে ছড়িয়েছেন বিভ্রান্তি তথ্য।কিন্তু সেই বাবু জেলা আওয়ামীলীগের ত্রান ও দূর্যোগ বিষায়ক সম্পাদক। তার ফেসবুক প্রোফাইল ঘাটলে এমন একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে। ওহিদুর রহমান টিপু যে একাধারে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের আইন সম্পাদক। তিনি মাগুরার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে কখনোও স্বয়ংক্রিয় ছিলেন না। তিনিও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন- সাধারণ সম্পাদক। মিয়া মাসুদুর রহমান যে এখন পর্যন্ত ঢাকার ভোটার এবং গত ত্রিশ বছর ধরে ঢাকার বাসিন্দা সেও জেলা আওয়ামীলীগের কৃষি বিষায়ক সম্পাদক। তাছাড়া যেখানে কমিটি থেকে বয়সের ওযুহাতে বাদ দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক একাধিক যোগ্য সৎ, নেতাদেরকে। সেখানে তার চার বছরের জুনিয়র সিদ্ধার্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় নেতাদের ক্ষমতায় বলিয়ান হয়ে বহাল তবিয়াতে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। পংকজ সাহা নামের অন্য আরেক নেতা শুধুমাত্র অতিথি পাখির ন্যায় মাগুরায় এসে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। নারী নেত্রী ইসমত আরা হ্যাপি যার ভাই লিটন ১৯৯৪ সালে প্রকাশ্যে মাগুরা জেলা আওয়ামিলীগের মিছিলে গুলিবর্ষণ ও হামলা করে। হ্যাপিও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হচ্ছেন। এনামুল হক হিরোক যে কলেজ সংসদ নির্বাচনে সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে জি,এস মনোনয়ন নিয়ে ধরা খেয়ে ছাত্রলীগকে নির্বাচনে পরাজিত করে। এরপর ১৭বছর মাগুরা জেলা যুবলীগের দায়িত্বে থেকে জীবনে একটা ইউনিয়ন কমিটি বা উপজেলা কমিটি দিতে পারে নি। আছে হিরোকের নামে একাধিক অভিযোগ। মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগ তার নাম প্রস্তাবই করে নি। অথচ হিরোক কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসাবে আছে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কিন্তু প্রস্তাবিত কমিটি থেকে একাধিক কমিটিতে থাকার অপরাধে বাদ পরেছেন সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। অন্যদিকে বিতর্কিত কবিরুল হক ১৯৯৩ সালে ঢাকা কলেজে মন্টু ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনিও মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক হচ্ছেন।
কমিটিতে জায়গা না পাওয়া অনেক নেতার পাশাপাশি সবশেষ কমিটিতে থাকা কয়েকজন নেতা নতুন এই কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন ত্যাগী ও আওয়ামীলীগ পরিবারের একাধিক নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে জানতে চায়লে- পৌর মেয়র ও সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ হায়দার বলেন, দুর্বল কমিটি হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট রাশেদ মাহমুদ শাহিন বলেন, এমন ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে যাদের দ্বারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা একসময় নির্যাতিত হয়েছে। এতে আমরা ক্ষুব্ধ। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বতর্মান শালিখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট কামাল হোসেন বলেন, ত্যাগীদের দূরে ঠেলে দিয়ে বিতর্কিত, জীবনে কখনো জয় বাংলা বলেনি এমন লোকজনকে কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। এতে অনেক ত্যাগী নেতা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পরই আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক শুরু করেন। তাদের একজন শফিকুজ্জামান বাচ্চু। নিজের ফেসবুক ওয়ালে এই আওয়ামী লীগ নেতা লেখেন, নতুন এই কমিটি তার সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন এই নেতা। কমিটি ভালো হয়নি বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ফ ম আবদুল ফাত্তাহ ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু বলেন, ফেসবুকে কোনো কমিটি প্রকাশ হয়েছে, তা তাঁরা জানেন না। তবে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রস্তাবিত একটি কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন কমিটিতে বিতর্ক, অযোগ্য এবং হাইব্রিডদের পদ দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে। এ বিষয়ে তারা কিছু বলতে রাজি হন নি।
ক্ষুব্ধ পদ বঞ্চিত ত্যাগী একাধিক আওয়ামী লীগ পরিবার ও নেতাকর্মীদের দাবি যে সব ব্যক্তি অভিযুক্ত ও যাদের নামে বিতর্ক আছে। তারা যদি কমিটিতে আসে তাহলে অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে। পাশাপাশি আগামী সংসদ নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। সুতরাং এইসব হাইব্রিড ও অভিযুক্তদের দল থেকে ছেঁটে ফেলা উচিৎ বলে জোর দাবি তুলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।