নরসিংদী শহরের মেরিস্টোপস ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নরসিংদী মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। এর আগে শুক্রবার (২৬ মে) দিবাগত রাতে ওই মা ও নবজাতক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহত ওই গৃহবধূর নাম সালেহা বেগম (৩০)। তিনি নরসিংদী শহরের শালিধা নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক হান্নান মিয়ার স্ত্রী।নিহত নারীর স্বজনরা জানান, শুক্রবার দুপুরের পর শহরের মেরিস্টোপস ক্লিনিকে নবজাতকের পরিস্থিতি জানার জন্য আলট্রাসনোগ্রাম করাতে যান প্রসূতি সালেহা। আলট্রাসনোগ্রামের রেজাল্ট সেখানকার একজন নারী চিকিৎসককে দেখান তিনি। ওই চিকিৎসক তাকে জানান, ১৫ দিন পর তার প্রসবের সম্ভাব্য সময়, তবে ইচ্ছে করলে আপনি আজই সিজার করাতে পারেন। সালেহা বিষয়টি স্বজনদের জানালে এক সপ্তাহ দেখার পর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেন স্বজনেরা। এ আলোচনার মধ্যেই ওই চিকিৎসক সালেহাকে স্যালাইন দেওয়ার কথা বলে কেবিনে নিয়ে যান।সন্ধ্যার দিকে ওই নারী চিকিৎসক সালেহার স্বজদের জানান, সালেহার তীব্র খিচুনি উঠেছে, তাড়াতাড়ি কয়েক ব্যাগ রক্ত যোগাড় করেন। অথচ হাসপাতালটিতে অবস্থানের সময়ও সালেহা ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ। রাত ৮টার দিকে স্বজনদের কাউকে কিছু না বলে সালেহাকে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে নেওয়া হয়। পরে তারা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে সালেহার সিজার করে ফেলেন। রাত ৯টার দিকে স্বজনদের হাতে একটি ছেলে নবজাতক তুলে দেয়া হয়। কিন্তু ওই নবজাতকের চোখ না ফোটায় হিটের মধ্যে রাখার কথা বলে তাকে আবার ভেতরে নিয়ে যায় তারা।দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষার পরও অপারেশন থিয়েটার থেকে সালেহাকে বের করছিলেন না তারা। রাত ১১টার দিকে ওই চিকিৎসক ও নার্স অ্যাম্বুলেন্স ডেকে সালেহাকে তুলে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্বজনরা জানতে চাইলে তারা জানান, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাহেপ্রতাপ এলাকায় পৌঁছার পরই অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে ওই চিকিৎসক ও নার্স নেমে পালিয়ে যান। ওই অবস্থায় স্বজনরা সালেহাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানকার চিকিৎসক জানান, ২-৩ ঘণ্টা আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।এদিকে রাত ১১টার দিকে নবজাতক শিশুকে স্বজনদের হাতে তুলে দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, নবজাতকের অবস্থা ভালো না, তাকে তাড়াতাড়ি নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ওই হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরামর্শ দেন, দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। রাত ২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা হন স্বজনরা। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। মা ও নবজাতকের মরদেহ এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।এ ঘটনায় মামলা কেন নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, স্বজন ও স্থানীয়দের হাতে আটক ক্লিনিকটির দুই কর্মকর্তাকে আমরা থানায় নিয়ে এসেছি। ফৌজদারি বিষয় না হওয়ায় আমরা এ ঘটনায় মামলা নিতে পারছি না। স্বজনদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগে লিখিত অভিযোগ জানাতে। বিষয়টি চিকিৎসা সংক্রান্ত হওয়ায় জেলার সিভিল সার্জনের পরামর্শে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।