নরসিংদীর ঘোড়াশাল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রথম দিককার পাওয়ার হাব। স্বাধীনতার পর থেকেই কেন্দ্রটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।ঢাকা ও নরসিংদী-টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকায় মানসম্পন্ন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বর্তমানে এ কেন্দ্রের আধুনিকায়নের কাজ চলছে। নতুন সঞ্চালন লাইন তৈরিতে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।এ ছাড়া পুরনো সাবস্টেশন সরিয়ে নতুন সাবস্টেশন তৈরি করা হচ্ছে।কেন্দ্রটির পুরনো ইউনিটগুলো রিপাওয়ারিং করা হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে কেন্দ্রটি থেকে ১ হাজার ৩৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এমনটি হলে শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ঘিরে হবে আরেকটি পাওয়ার হাব।এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতে বদলে যাবে আশপাশের শিল্পাঞ্চল, হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেষ্টায় ১৯৭৪ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট কমিশনিং হয়েছিল। দ্বিতীয় ইউনিটটি ১৯৭৬ সালে কমিশনিং হয়।বর্তমানে এ পাওয়ার হাবের আধুনিকায়নের কাজ চলছে।বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সাতটি ইউনিটের মধ্যে ইউনিট-১ ও ২ অবসরে গেছে।ভবিষ্যতে এখানে ২৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এরই মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়েছে।ইউনিট-৩ রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ৪ নম্বর ইউনিট স্ট্যান্ডবাই আছে।গ্যাস পাওয়া গেলে এগুলো চালু করা সম্ভব হবে। বর্তমানে দুটি ইউনিট উৎপাদনে আছে।এর মধ্যে একটি হচ্ছে ইউনিট-৫, যার লোড ১৮০ মেগাওয়াট।আরেকটি হচ্ছে ইউনিট-৭। এটি চলছে ২০০ মেগাওয়াটে। গ্যাস ও স্টিম টারবাইনে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।সোমবার সরেজমিন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আশপাশের এলাকা পরিদর্শন শেষে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন,কেন্দ্রটির চলমান কাজ দেখে আমি সন্তুষ্ট।তবে কিছু স্থানীয় ঠিকাদার কাজে দেরি করছেন।তাদের বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেব।আবার করোনা মহামারির কারণে কাজে কিছুটা দেরি হচ্ছে।এ মুহূর্তে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৩৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হচ্ছে।গ্যাসের চাপ কম থাকার কারণে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে। কেন্দ্রটি ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। আশা করছি আগামী বছর গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি পাবে।এ ছাড়া ঘোড়াশালের জন্য আলাদাভাবে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছি।এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্রিড জটিলতার ঘটনা ঘটলেও আধুনিক সাবস্টেশন তৈরির কারণে এ সমস্যা ভবিষ্যতে আর থাকবে না।যেহেতু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোটাই গ্যাসভিত্তিক, এ জন্য সাশ্রয়ী গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।আবার রিপাওয়ারিং করায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বড় ভূমিকা রাখবে।আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিরাপত্তা বৃদ্ধি, অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে ফায়ার সেফটি বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন,ঘোড়াশাল একটি নতুন জায়গায় যাচ্ছে।এই পাওয়ার স্টেশন হবে বিদ্যুতায়নের আধুনিক হাব। সাবস্টেশন ও জিআইএস সুইচিং স্টেশন বিদ্যুতের মান সমন্বিত রেখে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে দেবে।পুরনো সাবস্টেশনগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।এখানে অনেক পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।সেগুলোকেও ধীরে ধীরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।ঘোড়াশাল আবার নতুনভাবে তৈরি হচ্ছে। এখানে পিজিসিবির সাবস্টেশন আছে।পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সাবস্টেশন হচ্ছে।সব মিলিয়ে আধুনিক এক পাওয়ার হাব হয়ে উঠছে ঘোড়াশাল।ভবিষ্যতে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ঘোড়াশাল ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে।বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ঘোড়াশাল বড় ভূমিকা রাখবে।এর সঙ্গে সঞ্চালন লাইনগুলো ঠিক করা হচ্ছে। পুরনো সাবস্টেশনগুলো বদলে ফেলা হচ্ছে।ঘোড়াশালের আশপাশ এলাকায় বড় ধরনের শিল্পাঞ্চল আছে।এখানে সার ও সিমেন্ট কারখানা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানা আছে।এই কেন্দ্র থেকে সেই শিল্প-কারখানাগুলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে।