গাজীপুর মহানগর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন টঙ্গী বাজার মন্দির কমিটির সভাপতি বাবু রঞ্জিত কুমার দাস এক শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, টঙ্গী বাজার মন্দির বেশ অনেক পুরনো ১৯৮৩ সালে তুরাগ নদে পাশে গড়ে উঠে মন্দির। নদী ভাঙ্গনের ফলে স্থান পরিবর্তন করে ১৯৯২ সালে চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০১০ সালে নতুন কমিটির মাধ্যমে আমি সভাপতির দায়িত্ব নিষ্ঠার সহিত পালণ করে আসছি। তিনি আরো বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর ২০শে অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখ শুক্রবার পঞ্জিকার তিথিলগ্ন অনুযায়ী সকাল ৬ টা ১০ মিনিটে কল্পা আরম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ মঙ্গলাচরণ ঘট স্থাপন অধিবাস।পৌরাণিক শাস্ত্র মতে মনে করা হয় মাতৃপক্ষ ষষ্ঠী তিথিতেই মা দুর্গা স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে পদার্পণ করেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন চার সন্তান লক্ষ্মী গণেশ কার্তিক ও সরস্বতীকে।
ষষ্ঠী তিথিতেই ঢাকের বাদ্যির সাহায্যে মা দুর্গা ও তার সন্তানদের স্বাগত জানানো হয় তাছাড়া মা দুর্গার মুখের আবারণ উন্মোচন করা এই দিনের প্রধান কাজ।
তাই এই সকল আনুষ্ঠানিকতার
মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষদের বছরের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা যা আগামী ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার দশমী পূজা দর্পণ ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এ লক্ষ্যে আজ সকাল থেকেই টঙ্গীর বিভিন্ন পূজা মন্ডপে ভক্তগণ নানাবিধ ভোগ ও পুষ্পার্ঘ নিয়ে মা দেবী দুর্গার ষষ্ঠী পূজার উদ্দেশ্যে আসন নিবেদনের লক্ষ্যে পবিত্র মনে দেবী দুর্গার শ্রীচরণে এসে সংসার তথা সন্তানাদিদের মঙ্গল কামনার্থে দুঃখ কষ্ট নিবারণ এর আর্তী জানাতে আজকের এই ষষ্ঠীর শুভক্ষণে মন্দির প্রাঙ্গণে এসে হাজির হয়েছেন ।
ধর্মীয় পুরাণে কথিত আছে যে দুর্গা শব্দের অর্থ হচ্ছে দুর্গতিনাশিনী দুঃখ-কষ্ট নিবারণ কারিনী তিনি হচ্ছে দেবী দুর্গা।
তাই শাস্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী বিশেষ করে মায়েরা তাদের পুত্র সন্তানদের ভবিষ্যৎ মঙ্গল কামনা আয়ুবৃদ্ধি শারীরিক নিরোগ এর আর্তি জানাতে মহাষষ্ঠী পূজার উপবাস থাকার পৌরাণিক রীতি রয়েছে। তাই সকালে মন্দিরের পুরোহিতগণ মন্ত্রাদি পাঠ করে মায়ের উদ্দেশ্যে ভোগাদি নিবেদন করেন সাথে ক্ষণে ক্ষণে ঢাকের বাদ্যি কাসর শঙ্খ উলুধ্বনি ও ধুপ ধুনোর মৌময় ঘ্রাণের মুখরতায় মন্দির প্রাঙ্গণ যেন এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে উঠেছে।মহামায়ার আগমনীতে সকল অশুভ শক্তির নাশ এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে দেবী দুর্গাকে দুর্গতিনাশিনী বলা হয়। মহিষাসুরের অসুর বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন তাকে মহিষাসুরমোদিনী বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও মহা সমারহের সাথে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তাছাড়া টঙ্গী থানা পূজা কমিটির পাশাপাশি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিটি পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও কঠোর নজরদারির মধ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিয়োজিত রয়েছে।
৫ দিনব্যাপী প্রতিটি মন্দিরে পূজা অর্চণা সন্ধ্যা আরতি ধর্মীয় আলোচনা ও প্রসাদ বিতরণ করা হবে। মন্দির প্রাঙ্গণে দর্শকদের ভিড় পরিলক্ষিত হবে। ইতোমধ্য প্রতিমা তৈরি ও মন্দিরের সাজসজ্জা কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এই দুর্গাপূজার তাৎপর্যয় উল্লেখ রয়েছে পুরাকালের মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মাদেবের তপস্যা করে বরপ্রাপ্ত হন যেন তাকে কেউ যুদ্ধে পরাজিত করতে না পারে। তবে কোন একজন নারীর হাতে তার মৃত্যু হবে। তখন থেকে ব্রহ্মার বরে বলিয়ান হয়ে মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ আক্রমণ করেন। দেবরাজ ইন্দ্রের কাছ থেকে স্বর্গরাজ্য দখল করেন। মহিষাসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে সকল দেবতাগণ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর শরণাপন্ন হন।তখন শ্রীবিষ্ণু ও শিব দেবতাদের মুখে মহিষাসুরের অত্যাচারের বর্ণনা শুনে ক্রোধাম্বিত হন এবং তাদের তেজদীপ্ত ক্রোধে আবির্ভূত হলেন দশভূজা শ্রী শ্রী দুর্গা দেবী। তেজোময়ী দেবীকে দেবতারা একে একে তাদের অস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে তুললেন রণরঙ্গিনীর মূর্তিতে।
মহাদেব দিলেন তার ত্রিসুল, বিষ্ণু দিলেন সুদর্শন চক্র, দেবরাজ ইন্দ্র দিলেন বজ্র, যমরাজ দিলেন কাল দন্ড, পবন দেব দিলেন ধনুক, ও বামন পূর্ণ তৃণ, বরুণ দেব দিলেন শঙ্খ,হিমালয় পর্বত দিলেন বাহনরূপে একটি সিংহ, দেবী দুর্গা দেবতাদের অস্ত্র অলংকারে সজ্জিত হয়ে রণভূমিতে উপস্থিত হলেন মহিষাসুরের অসুর বাহিনীকে দেবী দুর্গা পরাজিত করলেন। অবশেষে মহিষাসুর নিজেই আসলেন যুদ্ধ।
সেই যুদ্ধে দেবী দুর্গা মহিষাসুর কে ত্রিশূল দিয়ে বিদ্ধ করলেন। মৃত মুখে মহিষাসুর মা দুর্গা দেবীর কাছে বর প্রার্থনা করেন যেন শ্রীশ্রী দুর্গাদেবীর সঙ্গে তার যেন পূজা হয় । কিন্তু শ্রী শ্রী দুর্গা দেবী মহিষাসুরকে বলেন পূজা দেবতাদের জন্য তোর জন্য নয়। তবে এমর্ত্যবাসী তোর পূজা করবে। তবে দেবতা জ্ঞানে নয় অসুর জ্ঞানে। আর তখন থেকেই অকালবোধনী দুর্গতিনাশিনী দুঃখ-কষ্ট নিবারণকারী ভক্ত পরিত্রাণ রূপিণী মা দেবী দুর্গার পূজা হয়ে আসছে।