তীব্র তাপদাহ চলছে পুরো বাংলাদেশে। গ্রাম অঞ্চলে মাঠে মাঠে ধান কাটার ধূম। দিন রাতরজুড়ে ব্যস্ত লোকালয়। তেমনি শহর বন্দরে খেটে খাওয়া অফিসমুখী ও দিন মুজুর সবাই গরমে অতিষ্ট। গামে ভিজছে শরীর আবার গায়েই শুকাচ্ছে জামা কাপড়। এক কথায় তীব্র গরমে নাকাল দেশের মানুষজন।
এই সময় বাড়তি আয়ের জন্য ঝুঁকছে কিছু যুবক। বাজার বন্দরে পথের মোড়ে সাজিয়ে বসেছে আখের রস বা সরবতের মোবাইল দোকান নিয়ে। এখন তেষ্টায় পথিকরাও চাইছে একটু গলা ভেজাতে। লেবু সরবতের মতো এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে টাটকা আখের রসও।
পলাশ উপজেলার জিনারদী রেলস্টেশনে তেমিনি দেখা মেশিনে মাড়াই করে আখের রস বিক্রেতা আরিফ হোসেনের সাথে। বয়সে একদম টকবকে যুবক। বাড়ি উপজেলা জিনারদীর পাঁচভাগ গ্রামে। মা বাবা ছাড়াও আরিফরা দুই ভাই এক বোন। পরিবারের বড় অরিফ। তাই আমি এই ব্যবসা দিয়ে সংসারের উপার্জনের হাল ধরেছি। বর্তমানে আমার কষ্টের দিন ফুরিয়ে এখন আমি স্বাবলম্বী।
ব্যবসার সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে আরিফ আরো জানায়, এই আখ মাড়াই মেশিন কিনতে ব্যানগাড়িসহ প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পরিবারের সবাই মিলে এই ব্যবসা নিয়ে আমরা ব্যস্ত থাকি। বাড়িতে মা বাবাসহ সবাই আখ পরিস্কারের কাজ করে। আমি বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও রেলস্টেশনে আখ মাড়াই করে রস বিক্রি করছি।
বর্তমানে দেশে তাপদাহ তীব্র থাকায় রস বিক্রি ভালো হচ্ছে। কেউ এক গ্লাস খেয়ে বোতল দিয়ে বাসায়ও নিচ্ছে। আমি প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার রস বিক্রি করতে পারছি। খরচ বাদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালো ভাবে চলতে পারছি। এখন আর পূর্বের মতো ছোট ভাই বোনদের পড়া লেখার খরচ চালাতে কষ্ট হয়না।
আখের রস পান মন্দের চেয়ে ভালোর দিকই বেশী। আখের রস হল আখের সবচেয়ে বিশুদ্ধতম রূপ। আখের রস ভিটামিন ও মিনারেলের ভালো উৎস। ক্যালোরির পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম মেলে এই রস থেকে।
শরীরের শক্তির প্রাথমিক উৎস হলো চিনি যা গ্লুকোজ নামে পরিচিত। এটি শর্করার ভাঙ্গন থেকে আসে। আখের রসকে দুটি সাধারণ চিনি, ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজে বিভক্ত করে প্রক্রিয়া করে শরীর। ফলে এনার্জি বাড়ে আখের রস খেলে। গরমের ক্লান্তি দূর করতে দারুণ সহায়ক আখের রস। এটি ডিহাইড্রেশন রোধ করে।
গরমে ঘামে ক্লান্ত হয়ে ফেরার পথে একগ্লাস মিষ্টি আখের রসে চুমুক দিলে যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। শরীর ঠাণ্ডা করতে এই রসের জুড়ি মেলা ভার।