নরসিংদীর পলাশে এক সময়ের ফেলনা জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানাও এখন সম্পদ। অথচ এক সময় কচুরিপানা আপদ জলজ উদ্ভিদ বলেই গণ্য হত। কচুরিপানা মুক্তভাবে ভাসমান বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা অ্যামাজন এলাকায়।
সবুজ চকচকে এবং ডিম্বাকৃতি পাতাবিশিষ্ট কচুরিপানা পানির উপরিপৃষ্ঠে ১মিটার পর্যন্ত বাড়ে। এর কান্ড থেকে দীর্ঘ, তন্ময়, বহুধাবিভক্ত মূল বের হয়। যার রং বেগুনি-কালো। এর ফুলগুলো সাদা পাপড়ির মধ্যে বেগুনি ছাপযুক্ত এবং মাঝখানে হলুদ ফোঁটা থাকে। সাদা পাপড়ির স্থলে কোথাও হালকা আকাশি পাপড়িও দেখা যায়।
পুরোপুরি ফুল ফোটার আগে দেখতে অনেকটা নল আকার দেখায়। পাপড়িগুলোর মাঝখানে পুংকেশর দেখতে। প্রতি ফুলে ৬টি করে পাপড়ি। প্রায় সারা বছর কচুরি ফুল ফুটতে দেখা যায়। কচুরি ফুলের মুগ্ধতায় মানুষের মধ্যে প্রকৃতি প্রেম জাগ্রত হয়। ময়ূরের পালকের মত দেখতে কচুরিপানা ফুল।
গ্রামবাংলার অতি পরিচিত একটি জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা। দেশের প্রায় প্রত্যেক অঞ্চলেই নদ-নদী, পুকুর, জলাশয়, হাওড়, নিম্নাঞ্চলে কচুরিপানার দেখা মেলে। কচুরিপানা পলাশ উপজেলাতেও কচুরীপানাই নাম বলে সবাই ডাকে। কচুরিপানা দ্রুত বংশবিস্তার করে। প্রচুর বীজ তৈরি করে যা ৩০বছর পরও অঙ্কুরোদগম ঘটাতে পারে। রাতারাতি বংশবৃদ্ধিতে প্রায় দুসপ্তাহে দ্বিগুণ হয়।
এটি এখন প্রধানত: জৈবসার হিসেবেই অধিক ব্যবহৃত হলেও বর্ষাকালে বন্যা আক্রান্ত অঞ্চলে গবাদি পশুর খাদ্য জোগায়। জলমগ্ন এলাকায় বাঁশ দিয়ে আটকে রেখে ঢেউয়ের আঘাত থেকে ভিটেমাটি রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া পানিতে স্তূপকৃত পচা কচুরিপানার ওপরে ভাসমান নানা শাক-সবজিও ফলানো যায়।
কচুরিপানাকে শুঁকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও তৈরি করা হয়। কচুরিপানা থেকে তৈরি হচ্ছে টব, ফুলদানি, শো-পিচ, পাটি, ট্রে, ফলঝুড়ি, ডিম রাখার পাত্র, পাপোশ, মোড়া, টুপি, আয়নার ফ্রেম, ডাইনিং টেবিলের ম্যাটসহ প্রায় ২০ ধরনের পণ্য। এসব পণ্য বর্তমানে বিদেশেও রফতানী হয়।
পলাশ উপজেলার পন্ডিত পাড়ার শিক্ষক কুমুদ রঞ্জন দেবনাথ বলেন, যে কচুরিপানাকে আগে জলজ জঞ্জাল বা আপদ মনে করা হতো। তা বর্তমানে কৃষি, গো-খাদ্য ও হস্তশিল্পের কাজে ব্যবহৃত হয়ে সম্পদে পরিনত হয়েছে। কচুরিপানা অভিশাপ হয়ে এলেও বর্তমানে তা অর্থকরি হয়ে উঠেছে। অসাধারণ অনেক কিছু কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ব্যবহার যত বাড়বে দেশের অর্থনীতি তত উন্নত হবে।