নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাংগা গ্রামে লক্ষণ সাহার জমিদার বাড়ি অবস্থিত।একটি পূর্ণাঙ্গ শৈল্পিক জমিদার বাড়ি, এর পাশেই ছোট্ট আরেকটি কারুকার্য খচিত ঘর, একটি অর্ধনির্মিত প্রাচীন বাড়ি। এ বাড়ি এখন কালের স্বাক্ষী। জমিদার বাড়ির পেছনে রয়েছে গাছ- গাছালি যুক্ত বাগান। জমিদার বাড়ি সহ এই বাগানের চারিদিকটা উঁচু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। রয়েছে সেই সময়ই তৈরি করা জমিদার বাড়ির সুন্দর একটি পুকুর আর সান বাধানো পুকুর ঘাট। পুকুরের চারপাশে পূঁজা করার জন্যে চারটি মঠ ছিলো। ২-৩ টা নষ্ট হয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। একটা অবশিষ্ট আছে যা পুকুর ঘাটেই দেখা মিলবে। লক্ষন সাহার জমিদার বাড়ি পাশেই কুন্ডু সাহার জমিদার বাড়ি। একবারে পাশাপাশি দুইটা বাড়ি। আর লক্ষণ সাহার জমিদার বাড়ি হতে ৫ মিনিটের দুরত্ব সিধেন সাহার জমিদার বাড়ি।
তৎকালীন ভারতবর্ষে এই এলাকাটি ছিল দেবোত্তর হিসেবে। মূলত দেবোত্তর বলতে বুঝায় ওয়াকফাহ্ জমি। ঐ সময়ে দেবোত্তর জমি হলে জামিদারকে খাজনা দেওয়া লাগতোনা। এই জমিদার বাড়িটি তৈরি করেছিলেন জমিদার লক্ষণ সাহা। মূলত তিনি ছিলেন প্রধান জমিদারের অধিনস্থ সাব-জমিদার। জমিদার লক্ষণ সাহার ছিল তিন ছেলে (নিকুঞ্জ সাহা, পেরিমোহন সাহা ও বঙ্কু সাহা)। বঙ্কু সাহা ভারত ভাগের সময় এখান থেকে ভারতে চলে যান। থেকে যায় দুই ভাই। পাকিস্থান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হওয়ার কিছু পূর্বে নিকুঞ্জ সাহাও ভারতে চলে যায়। তখন থেকে যায় পেরিমোহন সাহা। এই পেরিমোহন সাহার ছিল এক ছেলে, তার নাম ছিলো বৌদ্ধ নারায়ন সাহা। বৌদ্ধ নারায়ন সাহার কাছ থেকে বাড়িটি ক্রয় করেন আহম্মদ আলী (উকিল)। মূলত আহম্মদ আলী সাহেব উকালতি পেশার সাথে সংযুক্ত ছিলেন বিধায় বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি উকিলের বাড়ি হিসেবেই বেশি পরিচিত।
জমিদার লক্ষণ সাহার বাড়ির কাছেই রয়েছে আরো একটি কারুকার্যময় সুন্দর পুরোনো বাড়ি। বাড়িটিকে সবাই সুদান সাহার বাড়ি হিসেবে চেনে ও জানে। সুদান সাহার বাড়িও অনেক দৃষ্টিনন্দন ও কারুকার্যময়। সুদান সাহার বাড়ি যে কেউ দেখলে মুগ্ধ হবে। এ বাড়ির সামনেও রয়েছে পুকুর, শানবাঁধানো পুকুর ঘাট। সামনে খোলা জায়গা। জমিদার লক্ষণ সাহার বাড়ি থেকে অল্প দূরে রয়েছে আরেকটি পুরোনো বাড়ি। বাড়িটিকে সবাই কুণ্ডু সাহার বাড়ি হিসেবে চিনে যেটি বর্তমানে পরিত্যক্ত কিন্তু আয়তনে জমিদার লক্ষণ সাহার এবং সুদান সাহার বাড়ি অপেক্ষায় অনেক বড়। কুণ্ডু সাহার বাড়িতে বর্তমানে কেউ বসবাস করে না।
স্হানীয়রা জানান, প্রতিদিনই ঢাকাসহ আশেপাশের জেলা থেকে পর্যটকরা দেখতে আসেন এই বাড়ি। ভ্রমণ প্রিয় পর্যটকদের প্রিয় জমিদার বাড়ি। আরও জানান,নেই এই বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী, নেই থাকা খাওয়ার হোটেল। তবুও দিনের আলোতে পর্যটকরা দেখতে এসে আবার দিনেই চলে যায়। সরকারি ভাবে এই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ পরিচর্চা করলে ভ্রমণ প্রিয় হয়ে উঠবে ডাংগা জমিদার বাড়ি।