নাজমুল হক মণি:নরসিংদীর পলাশের ডাংগা ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের বকুল মিয়া বর্ষা মৌসুমে বিল থেকে শাপলা সংগ্রহ করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিটি বর্ষার মাঝামাঝি সময় যখন বিল- ঝিলে শাপলা ফুটে প্রকৃতিক সৌন্দয্য বর্ধন করে, সে সময়ে শুরু হয় বকুলের শাপলা আহরোণ ও বিক্রির ধূম।
বর্ষায় পলাশ ও গাজীপুর কালীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বর্ষার পানিতে এখন টৈটুম্বুর। বিশেষ করে উপজেলার বিলগুলোতে এখন ভরা যৌবন। বর্ষার নতুন পানিতে প্রাণ ফিরে পায় ডাংগার বিলসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার বিল-বেলাই সহ উপজেলার বেশকিছু বিল। জেলেদের পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়ে গেছে বিল পাড়ের মানুষদের। জীবন জীবিকার অন্বেষণে তারা চষে বেড়াচ্ছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। বিলের জলাশয়গুলো স্থানীয় মানুষের আহারের ব্যবস্থা করে চলেছে বিভিন্ন উপায়ে।
সাধারণত বর্ষা মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নিয়ে আসলেও বিল পাড়ের মানুষের জন্য বয়ে নিয়ে আসে আশীর্বাদ। নতুন পানিতেস ফুটে অসংখ্য শাপলা ফুল। ভোরে এসব ফুল একসাথে ফুটে উঠলে মনে হয় যেন শাপলার সাম্রাজ্য। আর এই শাপলাই স্থানীয়দের আহার যোগাতে সহযোগিতা করে।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় শাপলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতিদিন বিল পাড়ের মানুষেরা শাপলা সংগ্রহে ভোর রাতে বেড়িয়ে পড়ে। বছর দশেক আগে এমন অবস্থা ছিল না। হাতেগোনা কয়েকটা নৌকা দেখা যেত বিলে, যারা শাপলা সংগ্রহ করতো। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। সকলেরই চাহিদা রয়েছে, মোটামুটি ভালো দামে বিক্রিও করা যায়। তাই কদর বেড়েছে শাপলার। ভোর রাত থেকে শাপলা তুলতে বের হয়ে যান বকুল মিয়া। তিনি তালতলার বড় বিলপাড়ের বাসিন্দা। সবশেষ বাবার রেখে যাওয়া অল্প জায়গাতে শুকনো মৌসুমে চাষাবাদ,মাছ ধরে বিক্রি করাসহ বর্ষায় শাপলা বিক্রি করে সংসারের আহার যোগাড় করে চলেছেন।
বকুল মিয়া বলেন, শাপলা বিক্রির জন্য তিনি ঢাকার ও স্হানীয় ব্যবসায়ীর সাথে শাপলা বিক্রি করেছেন। প্রতিদিন প্রায় ১০০ আটি শাপলা ওই ব্যবসায়ীকে দিলে তার আয় থাকে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। কিন্তু এত বেশি শাপলা তুলাটা অনেক কষ্টেকর। শাপলা যে শুধু বিল পাড়ের মানুষ তোলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তা কিন্তু নয়। এই শাপলা তুলে অনেকে আবার সবজির চাহিদাও মেটান।
পলাশ উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা আয়েশা আক্তার বলেন, শাপলা মানুষ চাষাবাদ করে ফলায় না। প্রাকৃতিক নিয়মেই বর্ষার পানিতে বেড়ে ওঠে। কোনধরনের যত্ন, পরিচর্যাও করা লাগে না। কিন্তু আমরা যদি আমাদের মাটিকে উর্বর, কিটনাশক মুক্ত রাখতে না পারি, তাহলে প্রকৃতির এই উপহার একদিন আমাদের চোখের সামনেই হারিয়ে যাবে।