1. admin@jonogonerbani.com : admin :
বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৮ অপরাহ্ন

জমে উঠেছে আড়াই’শ বছরের ঐতিহ্য জামাই মেলা

  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫

মোঃ নাজমুল হক মণি: গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার কাপাইস গ্রামের বিনিরাইল জমে উঠেছে আড়াই’শ বছরের পুরনো ঐতিহ্য জামাই মেলা বা মাছের মেলা। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে এক দিনের জন্য এ মেলা জমে উঠে। মূলত এটা পৌষ মেলা। কেউ বলে জামাই মেলা, আবার কেউ কেউ বলে মাছের মেলা। আর এই দিনটিকে ঘিরেই ওই গ্রামে দিনব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী। এক টিকেটে দুই ছবি। বলাটা খুব বেশি অযৌক্তিক হবে না, এই মেলায় আছে একের ভেতর দুই। এক কথায়- রথ দেখা আর কলা বেচা। কারণ এটা জামাই মেলা হলেও, এখানে ছোট-বড় মাছের বিরাট মেলা বসে।

পৌষ মাসের শেষ মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিনে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য। বক্তারপুর, জামালপুর ও মোক্তারপুর ইউনিয়নের চার মোহনায় বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামে বসে এ মাছের মেলা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ছাড়াও ঢাকা,গাজীপুর,নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাংগাইল, ময়মনসিংহ,মুন্সিগঞ্জ,মানিকগঞ্জ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। প্রতি বছর পৌষ- সংক্রান্তিতে এক দিনের জন্য এ মেলা জমে উঠে।

মেলা প্রাঙ্গণে প্রায় ৩ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মাছের মেলায় সামুদ্রিক পাখি, চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, ইলিশ, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশী মাছও।

মেলায় বিভিন্ন ধরনের মাছের পাশাপাশি ফল, খেলনা, বিভিন্ন প্রকারের আচারসহ সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বালিশ মিষ্টি ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। বালিশ মিষ্টি সর্বোচ্চ তিন কেজি এবং সর্বনিম্ন এক কেজি।

স্থানীয়রা জানান, পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে আড়াই’শ বছরের বেশি সময় ধরে মেলাটির প্রচলন হয়। মূলত পৌষ মেলা হিসেবে শুরু হলেও পরবর্তীতে এটি জামাই এবং মাছ মেলা নামে পরিচিতি পেয়েছে। মেলাকে কেন্দ্র জামালপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের শ্বশুর-শ্বাশুরিরা তাদের মেয়ের জামাইকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানায়। এ মাছের মেলাকে ঘিরে আশেপাশের কয়েক জেলার মানুষের সমাগমে এখানে দিনভর চলে আনন্দ-উৎসব। মাছের মেলা হলেও চলে এলাকার জামাইদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। কালীগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ পৌরসভা, জামালপুর,বাহাদুরশাদী, বক্তারপুর, জাঙ্গালীয়া,মুক্তারপুরসহ আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সেই জামাইরা হচ্ছেন মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শণার্থী।

বিনিরাইলের মাছের মেলা যেন জামাই-শ্বশুরদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে পারে। জামাইরা চান সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুরবাড়িতে যেতে। আবার শ্বশুররাও চান সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে জামাইকে আপ্যায়ন করাতে। মেয়েরা তাদের স্বামীদের নিয়ে বাবা বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তাই এ মেলা জামাই মেলা নামে পরিচিতি পায়।

আড়াই’শ বছরের বেশি সময় ধরে কালীগঞ্জের বিনিরাইল (কাপাইস) গ্রামে পৌষ মাসের শেষ দিনে বসে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। মেলাটিকে ঘিরে ভিড় জমায় দূর-দূরান্ত থেকে মাছ কিনতে আসা জামাই, এলাকার শ্বশুর ও উৎসুক দর্শনার্থীরা।

মেলার প্রধান আকর্ষণ প্রায় লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৯ ফুট লম্বা ৯২ কেজি ওজনের পাখি মাছ। একদিনের মাছের মেলায় লাখো মানুষের ঢল। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকেই রাত ১০ টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা। তবে এ মেলায় জামাই-শ্বশুড়ের উপস্থিতি বেশি থাকলেও এটাকে সবাই মাছের মেলা বলেন।

নরসিংদী থেকে এসছেন কাউসার তিনি বলেন, পৌষ মাসের শেষ দিনে বসেছে ঐতিহ্যবাহী বিনিরাইলের মাছের মেলা। দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় ছুটে আসে হাজার হাজার মানুষ। কর্মব্যস্ততার কারণে খুব একটা সময় পাই না। আমি প্রায় তিন বছর যাবত এ মেলায় হৃদয়ের টানেই ছুটে আসি।

নারায়ণগঞ্জ থেকে শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন জামাই রিপন খন্দকার। তিনি বলেন, অনেক বছরের পুরনো এ মেলাটি আমার দেখার খুব শখ ছিল। তাই শ্বশুর বাড়ি থেকে আমাকে নিমন্ত্রণ পেয়ে আমি মেলায় এসেছি। মেলাই ঘুরছি, কিছু মাছ শ্বশুর বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যাবো।

স্থানীয় প্রবীণ গফুর জানান, কৃষকের ধান কাটার পর ওই জমিতে স্থানীয়রা এ মেলার আয়োজন করেন। মেলার প্রধান আকর্ষণ বিশাল আকৃতির মাছ। মেলাকে সামনে রেখে আশপাশের প্রতিটি বাড়িতে মেয়ে, জামাই, নাতী-নাতনী ও আত্মীয়-স্বজনে ভরে যায়। ঈদ, পূজা পার্বন বা অন্য কোনও উৎসবে দাওয়াত পেয়ে অনেক সময় শ্বশুর বাড়ি না আসলেও বিনিরাইলের মাছের মেলায় জামাইরা ঠিকই আসে। বলতে গেলে এটি এক প্রকার রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। নদী ও সাগরের বড় বড় মাছ, মিষ্টি, তৈজসপত্রসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও বিক্রি হয় এ মেলায়। নানা রকমের খাবারের দোকানও বসেছে এ মেলায়।

ভৈরব থেকে এসেছেন মাছ বিক্রেতা কার্তিক দাস।তিনি বলেন, অনেক বছর যাবৎ এই মেলায় মাছ বিক্রি করি। এ বছর মাছের দাম একটু বেশি তাই ৩/৪ লাখ টাকার মাছ নিয়ে এসেছি। বিক্রি ভালো। গাজীপুর থেকে এসেছেন মিষ্টি বিক্রেতা হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, প্রতিবছর মেলায় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি বিক্রি করে থাকি। এবার বিক্রি খুবই ভালো। বিশেষ করে জিলাপি’তে ভীর লেগেই আছে। খেলনা বিক্রেতা সাইফুল বলেন, দশ বছর ধরে মেলায় আসি। প্রতি বছরের মতো এবারও বিক্রি ভালো। নিরাপত্তার ব্যবস্হা থাকলে আরও বেশি ভালো হতো।

মেলা আয়োজকরা জানান, মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ- সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। এবার আমরা বৃহৎ আকারে মেলার আয়োজন করেছি।

আরো খবর দেখুন এখানে
© জনগণের বাণী | আইটি সহায়তাঃ সাব্বির আইটি
Developed By Bongshai IT